২০২০ সালের শেষ মাসে যখন সবগুলো স্প্যান জোড়া লাগানো হয়, তখন থেকেই এই সময়সীমার কথা বলাবলি হলেও বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির শুরু সম্প্রতি। গত ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২২-এর শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।’

বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু জুনেই চালু হবে- ফের নিশ্চিত করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সেতু উদ্বোধনের তারিখ পেছানো হয়নি। আগামী জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ২০২০ সালের শেষ মাসে যখন সবগুলো স্প্যান জোড়া লাগানো হয়, তখন থেকেই এই সময়সীমার কথা বলাবলি হলেও বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির শুরু সম্প্রতি।

গত ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত প্রশ্নের উত্তরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা নাওডোবা প্রান্ত থেকে জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০২২-এর শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ দ্রুতগতিতে চলছে।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সরকারের পক্ষ থেকে জুনের বদলে বছর শেষে সেতু চালুর বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। সরকারপ্রধান জাতীয় সংসদে এই বক্তব্য দেয়ার দিনই মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন সচিবালয়ে। তবে তার বক্তব্যে সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছানো ছিল কঠিন।

সেদিন তিনি বলেন, ‘আসলে তো পদ্মা সেতু শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি যে যদি সম্ভব হয়, দেখা যাক, আমি ওনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেও কথা বলব যে উনি কী বলেন।’ পরে তিনি বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) যে কথাটি বলেছেন তার একটি লজিক হলো, রিসেন্টলি কিছু মালামাল আসতে সমস্যা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। এই মালামালগুলো মার্চ মাসে আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন কিছুটা আনসার্টেইনিটি চলে এসেছে।

‘এ জন্য আমার মনে হয়, আমাদের একটি সেইফটি মেজার… আমাদের টাইম আছে ২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব মালামাল আসবে। কিছু কিছু মালামাল আছে যেগুলো একটা বা দুটো দেশই পৃথিবীতে বানায়। এখন এমনিতেও কোভিডের জন্য আসতে দেরি হচ্ছিল, এখন যুদ্ধের কারণে দেরি হচ্ছে।’

এরপর ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কথা বলেননি। ৩৩ মাস পর নিজ এলাকায় গিয়ে উৎফুল্ল কাদের প্রায় তিন বছর পর নিজ নির্বাচনি এলাকায় গেলেন সড়কমন্ত্রী। এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপন করতে বাড়ি যান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এলাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কখনও বিচ্ছিন্ন হয়নি। অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, আইসিইউ প্রতিস্থাপন, খাদ্যসামগ্রী, ত্রাণসামগ্রী দিয়েছি। বহুদিন মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে পারিনি তাই মনটা বিষণ্ন ছিল।

‘যারা আমার ভোটার, তাদের মাঝে আসতে পেরে ভালো লাগছে। নিজের বাড়িতে এসেছি, নিজের খাবার খেয়েছি, নামাজ পড়েছি। আমার আজকে অনেক ভালো লেগেছে। এটা অনির্বাচনীয়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’

আ.লীগের বিভেদ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই বছরেরও বেশি সময় ধরে ওবায়দুল কাদেরের এই নির্বাচনি এলাকাটি গণমাধ্যমের আলোচনায় এসেছে। শুরুটা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ভাই আবদুল কাদের মির্জা। গত পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামার পর তিনি কাদেরের বিরুদ্ধেও ক্রমাগত বক্তব্য রাখেন। পরে সেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে।

নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কাদেরের পরিবারের বিরোধের বিষয়টি আবার সামনে আসে। একরামুল আগামী সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী সদরের পাশাপাশি এই আসনটিতেও (নোয়াখালী-৫) মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কাদের যখন শেষবারের মতো বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের কাছে হারেন, তখন তার এই পরাজয়ের কারণ ছিলেন একরামুল। তিনি সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। কাদের ও তার মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হওয়ার পর জয় পান মওদুদ। তবে আওয়ামী লীগের দুজনের ভোট ছিল বিএনপি নেতার ভোটের চেয়ে বেশি।

তবে আওয়ামী লীগের এই বিভেদ দিয়ে কাদের একটি কথাও বলেননি। স্থানীয় ডাকবাংলোয় গিয়ে তিনি কেবল সবাইকে মিলেমিশে রাজনীতি করতে বলেছেন। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি নিয়েও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘গত ১৩ বছরে বিএনপি ২৬ বার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনে মানুষ হাসে।

‘১৩ বছরে পারল না, পারবা কোন বছর পারবা? তাদের আন্দোলনে প্রশ্ন সবার এই বছর না ওই বছর আন্দোলন হবে কোন বছর।’ জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম, কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।